শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘সুদের টাকা আদায়ের’ জন্য কক্সবাজারের চকরিয়ায় জনৈক যুবক কর্তৃক এক নারীকে তার পরিহিত শাড়ি দিয়ে গাছের সাথে প্যাঁচিয়ে বেঁধে নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে; ঘটনায় অভিযুক্ত যুবকের বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
এছাড়া ঘটনায় ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে চারজনের নাম উল্লেখ করে ৬ জনকে আসামী করে থানায় মামলাও দায়ের করেছেন।
বুধবার ওই নারীকে নির্যাতনের একটি ভিডিওচিত্র ফেইসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর ঘটনাটি জানাজানি হয়। তবে ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বিকাল পৌণে ৩ টায় চকরিয়া উপজেলার বরইতলি ইউনিয়নের হাফালিয়া কাটা ( মোড়াপাড়া ) এলাকায়।
ভুক্তভোগী ৩০ বছর বয়সী এ নারী ওই এলাকার বাসিন্দা।
মামলায় আসামী করা হয়েছে, চকরিয়ার বরইতলি ইউনিয়নের হাফালিয়া কাটা ( মোড়াপাড়া ) এলাকার বাসিন্দা জহির আহম্মদের ছেলে শওকত আলম (২৮), তার বাবা জহির আহম্মদ (৫০) ও মা সুফিয়া খাতুন (৫০) এবং শওকতের স্ত্রী শাহিনা আক্তার (২৩)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো দুইজনকেও আসামী করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে ১ মিনিট ৫৩ সেকেন্ডের ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, গ্রামীণ জনপদের একটি রাস্তার ধারে এক নারীকে তার পরিহিত শাড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রেখেছেন এক যুবক। এরপর ওই নারীর চুলের মুটি ধরে যুবকটি কিল-ঘুষি ও লাথি মারছেন। এক পর্যায়ের যুবকটির মাও লাঠি হাতে সেখানে উপস্থিত হন। পরে তিনিও লাঠি দিয়ে ওই নারীকে গুতা মারতে থাকেন। নির্যাতনের সাথে চলছিল ওই নারীকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ।
এসময় ঘটনাস্থলের আশপাশে উপস্থিত ২/৩ জন নারী এসে গাছের সাথে বাঁধা ওই নারীকে উদ্ধারেরও চেষ্টা করেন। তারপরও থেমে থেমে চলছিল নির্যাতন।
ভিডিওচিত্রটির পুরো সময় জুড়ে দেখা গেছে, মায়ের উপর নির্যাতন চালানোর সঙ্গে ওই নারীর বছর-দেড়েক বয়সের এক শিশু সন্তানের করুণকান্না আর মাকে উদ্ধারের আকুতির সুরও।
বুধবার রাতে ভুক্তভোগী ওই নারীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে বলেন, তার স্বামী এক নলকূপ মিস্ত্রীর সহকারি হিসেবে কাজ করেন। বছরখানেক আগে তার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে ভর্তি করান। এতে টাকার প্রয়োজন হওয়ায় প্রতিবেশী শওকত আলমের কাছ থেকে সুদের চুক্তিতে ৪ হাজার টাকা ধার নেন।
” গত ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত ধার নেয়া ওই টাকার অংক সুদাসলে দাঁড়ায় ১০ হাজার টাকা। এরই মধ্যে আমি ৮ হাজার টাকা শওকত আলমকে পরিশোধ করেছি। বাকি ছিল আরো ২ হাজার টাকা। “
পাওনা বাকি ২ হাজার টাকা কথা মত শওকতের কাছে পরিশোধ না করায় তার উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে দাবি করেন ভুক্তভোগী নারী।
ওই নারীর ভাষ্য, তার হাতে টাকা না থাকায় গত বৃহস্পতিবার কথা মত পাওনা পরিশোধ করতে পারেননি। এ নিয়ে আজ বৃহস্পতিবার শওকতের কাছে পাওনা পরিশোধের জন্য সময় চান। কিন্তু শওকত সময় দিতে রাজী ছিল না। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে তার ( ভুক্তভোগী নারী) উপরে ক্ষেপে যান।
ভুক্তভোগী ওই নারী বলেন, ” মঙ্গলবার বিকালে এক আত্মীয়ের বাড়ী থেকে ফেরার আমাকে পথরুদ্ধ করে শওকত। এক পর্যায়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে টেনে-হিঁচড়ে আমার পরনের শাড়ি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতন চালিয়েছে। “
এ নিয়ে অভিযুক্ত শওকত আলমের ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিক বার চেষ্টা করেও সংযোগ বন্ধ থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ঘটনার নিন্দা জানিয়ে নির্যাতনকারি শওকত আলমসহ জড়িতদের শাস্তির দাবি করেছেন বরইতলি ইউপি চেয়ারম্যান জালাল আহমদ সিকদার।
স্থানীয় এ ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, তার ইউনিয়নের এক নারীর উপর পাশবিক নির্যাতন চালানোর খবর শোনার পর ঘটনার ব্যাপারে পুলিশকে অবহিত করেছেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
সুদের টাকার জন্য এ ধরণের বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিও করেন জালাল আহমদ।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, এক নারীকে নির্যাতন চালানোর একটি ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার ঘটনাটি পুলিশের নজরে আসার পরপরই অভিযান চালানো হয়। এসময় অভিযুক্ত নির্যাতনকারি ওই যুবক পালিয়ে গেলেও তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বুধবার রাতে ভুক্তভোগী নারী বাদী হয়ে মূলহোতা শওকতকে প্রধান আসামী করে ৬ জনের বিরুদ্ধে দায়ের মামলাটি নথিবদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান হাসানুজ্জামান।
এসপি জানান, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply